পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১০

ওরে মজা রে ভাই....পার্ট ২

রোজার ঈদের পরদিন অর্থাৎ ১২.০৯.২০১০ তারিখে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। আমাদের সবার বাসা খুলনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে এখন আমরা চাকুরিজীবি। প্রায় সবাই চাকরি করি ঢাকায়। তাই সবাই একসাথে মিলিত হওয়ার একমাত্র সুযোগ হল ঈদের ছুটি। তাই ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে ট্যুরে যাওয়ার পরিকল্পনা করি। এই ট্যুরের নাম দেওয়া হয় "ওরে মজা রে ভাই"। দুর্ভাগ্যবশত আমি প্রথম ট্যুরে যেতে পারি নি। কিন্তু "ওরে মজা রে ভাই ......পার্ট-২" তে আমি অংশগ্রহণ করি। সিদ্ধান্ত হয় আমরা ১২.০৯.২০১০ তারিখে আমরা সকাল ৯.০০ টায় বাস স্ট্যান্ডে পৌছে যাব। কথামত আমরা সবাই ১২.০৯.২০১০ তারিখে ট্যুরে যাওয়ার উদ্দ্যেশে সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে পৌছালাম। আমাদের গন্তব্য ঐতিহাসিক "ষাট গম্বুজ মসজিদ"। আমরা রওনা হলাম ৯.৩০ এর দিকে।


রাস্তার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে পৌছে গেলাম ষাট গম্বুজ মসজিদে। নেমেই আমাদের ক্ষুদা লেগে গেল। যদিও আমরা নাস্তা করেই বাড়ি থেকে বের হয়েছি, তারপরও আমরা বাস থেকে নেমেই চলেই গেলাম মসজিদের পাশের দোকানগুলিতে। সেখানে আমরা ফটোসেশন করলাম।

মসজিদের ভিতর ঢুকতে টিকিট লাগে। আসলে মসজিদে যেতে টিকিট লাগে না কিন্তু এখানে একটি যাদুঘরও আছে। সেখানে প্রবেশ করতে টিকিট লাগে। তাই একবারে টিকিট কেটে ঢুকলাম আমরা। মসজিদ প্রাঙ্গনে ঢুকেই আমরা চলে গেলাম মসজিদের পিছনের পাশের পুকুরটাতে। এই পুকুরের একটি কাহিনী আছে। শোনা যায় এটা এখন দেখতে পুকুর মনে হলেও একসময় এটা আয়তনে বিরাট ছিল। এই পুকুর ঘুরে আসতে একটি ঘোড়ার নাকি পুরো একদিন লাগত। ঘটনাটা সত্যি কিনা জানি না। এখানে এখন পর্যটকদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যান্য জায়গা থেকেও অনেকে এসেছেন এখানে ঘুরতে। অদ্ভুত মনোরম দৃশ্য পুকুরের চারপাশে। চারিদিকে ঘন গাছপালা, দুএক জন সেখানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিল।

পুকুরের পাশ দিয়ে চলে গেছে কাচা-পাকা রাস্তা। রাস্তার দু'পাশে ঘন গাছপালার সারি। অনেক রকমের গাছ। রাস্তা দিয়ে হেটে চললাম আমরা। প্রকৃত গ্রামের গন্ধ আমাদের নাকে ভেসে আসছে। অদ্ভুত ভাল লাগছে আমাদের। সাথে আমাদের গপসপ তো চলছেই। গপসপের অধিকাংশ অংশ জুড়ে ছিল আমাদের স্কুল জীবনের বিভিন্ন কাহিনী। আমাদের বিভিন্ন সময়ের অনেক মজার স্মৃতি আমাদের মনে পড়তে লাগল। কি সুন্দর ছিল সেই জীবনগুলো! দেখতে দেখতে যোহরের আযান দিয়ে দিল। আমরা দ্রুত চলে এলাম মসজিদে। বন্ধুদের সবাইকে ডেকে আমরা নামায পড়তে গেলাম।

নামায শেষ করে আমরা মসজিদের ভিতর ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। স্থাপত্যশৈলীর এক অপরুপ নিদর্শন এই মসজিদটি। মসজিদের আলাদা কোন ছাদ নেই। গম্বুজ দিয়েই ছাদ তৈরী করা। অর্থাৎ ছাদের উপরে গম্বুজ স্থাপন করা না। গম্বুজ দিয়েই ছাদ তৈরী। এখানে আসলে গম্বুজ আছে মোট ৭৭ টি। তবে বিভিন্ন কারনে নাম হয়ে গেছে ষাট গম্বুজ মসজিদ। মসজিদের ভিতরের সব পিলারগুলো এখন পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। পিলারগুলো ছিল পাথরের তৈরী। একটি পিলার এখনও রেখে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের দেখার জন্য। মসজিদের ভিতর নানা ইসলামি স্থাপত্য শৈলী রয়েছে। আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম সব।

নামায পড়েই আমরা চলে গেলাম মাজারে। সেখানে আমরা একটি হোটেলে ঢুকলাম খেতে। যে হোটেলে খাওয়া দাওইয়া শুরু করলাম, একটু পরেই আবিষ্কার করলাম তাদের খাবার সব শেষের পথে। তাই তারা অন্য হোটেল থেকে খাবার নিয়ে এসে আমাদেরকে দিল। যাই হোক খাবার শেষ করলাম। শেষ করে আমরা মাজারে ঢুকলাম। সেখানে কদবেল দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ২০ টাকা দিয়ে একটি কদবেল কিনে সবাই মিলে খাওয়া শুরু করলাম। তারপর হঠাৎ করে মাথায় এল যে যাওয়ার সময় বাসে না যেয়ে একটা মাইক্রো ভাড়া করে নিয়ে যাব। যেই কথা সেই কাজ। কয়েক বন্ধু গেল মাইক্রো খুজতে গেল। কিন্তু হায় আমাদের ভাগ্যে কোন মাইক্রো ছিল না। কারন আমাদের কাছে খুব বেশি টাকা ছিল না। যাই হোক অবশেষে দুটো টেম্পু ভাড়া করে আমরা আসরে নামাযের পরপর রওনা হলাম। টেম্পুর ভিতরে সবাই মিলে গান গাইতে গাইতে আমরা পৌছে গেলাম খান জাহান আলী (রুপসা) ব্রিজের কাছে। রুপসা ব্রিজে আমরা সবাই সিড়ি বেয়ে উঠলাম। সেখানে অনেকক্ষন ঘুরলাম। সন্ধ্যার পর যখন ব্রিজের সব লাইটগুলো জ্বলে উঠে তখন অপরুপ সাজে সজ্জিত হয় ব্রিজ। আমাদের বাসার ছাদ থেকে রুপসা ব্রিজ দেখা যায়। অনন্য সুন্দর লাগে সন্ধ্যার পর। আস্তে আস্তে রাত বাড়তে লাগল। আমাদেরও যার যার বাসায় ফিরে যাওয়ার পালা শুরু হল। আস্তে আস্তে আমরা বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা হলাম। তবে বাড়ি যাওয়ার আগে "ওরে মজা রে ভাই....পার্ট-৩" করার মনঃবাসনা নিয়ে সবাই বাড়ি রওনা হলাম।
খুশির সংবাদ, আমরা বন্ধুরা ঠিক করেছি আগামী ১৯.১১.২০১০ তারিখে আমাদের "ওরে মজা রে ভাই....পার্ট-৩" সম্পন্ন করব ইনশাল্লাহ। এই উপলক্ষে আমরা একটি অফিসিয়াল লোগোও তৈরী করছি। নিচে লোগোটি দেওয়া হল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন